যোগাসন

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK
Please, contribute by adding content to যোগাসন.
Content

যোগাসন

যোগ বলতে বোঝায় মনঃসংযোগ করা। এই মনঃসংযোগ করতে হলে মানুষকে আরামপ্রদ বিশেষ কোনো ভঙ্গিমা বা আসনে বসে নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। যোগ এবং আসন দুয়ে মিলে হয় যোগাসন। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে যোগাসন অনুশীলন করলে সুস্থ থাকা যায়। আমরা নিয়মিত যোগাসন অনুশীলন করব। বিভিন্ন প্রকার যোগাসন আছে। যেমন— বজ্রাসন, শীর্ষাসন, হলাসন, পদ্মাসন, শবাসন, সিদ্ধাসন, শলভাসন, গোমুখাসন, সর্বাঙ্গাসন ইত্যাদি।

যোগের আটটি অঙ্গ । যথা—

১। যম - যম মানে সংযমী হওয়া।
২। নিয়ম - শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া। নিয়মিত ও পরিমিত স্নান, আহার ও বিশ্রাম করা।
৩। আসন - বিশেষ ভঙ্গিতে বসাকে আসন বলে।
৪। প্রাণায়াম - শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিকে প্রাণায়াম বলে। 

৫। প্রত্যাহার - মনকে বহির্মুখী হতে না দিয়ে অন্তর্মুখী করাকে প্রত্যাহার বলে।
৬। ধারণা - কোনো এক বিষয়ে মনকে একাগ্র করা।
৭। ধ্যান - কোনো এক বিষয়ে মনের অবিচ্ছিন্ন চিন্তা।

 ৮। সমাধি - ধ্যানস্থ অবস্থায় মন যখন ইষ্টচিন্তায় সম্পূর্ণভাবে নিমগ্ন থাকে তখন সে অবস্থানকে বলা হয় সমাধি।

আসন যোগের একটি অঙ্গ। স্থির ও সুখাবহ অবস্থিতির নামই আসন। সুতরাং যোগ অভ্যাস করার জন্য যেভাবে শরীরকে রাখলে শরীর স্থির থাকে অথচ কোনো কষ্টের কারণ ঘটে না তাকে যোগাসন বলে। 

পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা পদ্মাসন ও শবাসন সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা সিদ্ধাসন ও শলভাসন সম্পর্কে জানব এবং অনুশীলনের চেষ্টা করব।

Content added By

সিদ্ধাসন

সিদ্ধাসনরত এই আসনে কোনো ব্যক্তিকে দেখতে অনেকটা ধ্যানস্থ কোনো সাধু বা যোগীর মতো মনে হয়। সিদ্ধপুরুষগণ এই আসন অনুশীলন করেন বলে এই আসনের নাম সিদ্ধাসন।

অনুশীলন পদ্ধতি: 

সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে। এবার ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে পায়ের গোড়ালি উরুর সংযোগস্থল তলপেটের নিচে স্পর্শ করে রাখতে হবে। তারপর বাঁ পা হাঁটু ভেঙে ডান পায়ের ওপর রাখতে হবে। দু পায়ের গোড়ালি তলপেটের নিচে লেগে থাকবে। এবার হাত দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। হাতের তালু ওপর দিকে করে ডানহাতের কবজি ডান হাঁটুর ওপর আর বাঁ হাতের কবজি বাঁ হাঁটুর ওপর রাখতে হবে। দু হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনী ছোঁয়াতে হবে। অন্য আঙুলগুলো সোজা থাকবে। তারপর পিঠ, ঘাড় আর মাথা সোজা রেখে চোখ বন্ধ করে দু ভ্রূর মাঝে মনকে একাগ্র করার চেষ্টা করতে হবে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। পা বদল করে আসনটি ৫ মিনিট করতে হবে। শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।

গুরুত্ব ও প্রভাব:

সিদ্ধাসনে শরীরের যথেষ্ট বিশ্রাম হয়। এই আসনে বসে থাকার ফলে শরীর যেমন বিশ্রাম পায় তেমনি দু পা আড়াআড়ি আর পিঠ সোজা থাকার ফলে মন স্থির থাকে। হাঁটু আর গোড়ালির গাঁট শক্ত হয়ে গেলে এই আসনে উপকার পাওয়া যায়। এই আসনে কটিদেশে আর উদরাঞ্চলে ভালো রক্তসঞ্চালন হয় এবং এর ফলে মেরুদণ্ডের নিম্নভাগ আর পেটের ভিতরকার যন্ত্রগুলো সতেজ ও সবল হয়। কোমর ও হাঁটুর সন্ধিস্থল সবল হয়। এই আসন অভ্যাসে উদরাময়, হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি প্রভৃতি রোগ দূর হয়। অর্শ রোগে এই আসন অত্যন্ত ফলপ্রদ। সিদ্ধাসনে বসে জপ, প্রাণায়াম ও ধ্যানধারণাদি অভ্যাস করলে সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধিলাভ করা যায়।

Content added || updated By

শলভাসন

‘শলভ’ শব্দের অর্থ পতঙ্গ। এই আসন অনুশীলনের সময় শরীরকে পতঙ্গের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম শলভাসন। 

অনুশীলন পদ্ধতি: 

আরামদায়ক শক্ত কোনো সমতল জায়গায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। চিবুক মেঝের ওপর থাকবে। হাত দুটি সোজাভাবে শরীরের দুপাশে উরুর নিচে এবং হাতের তালু দুটো মাটিতে সমান করে পাতা থাকবে। হাঁটু, ঊরু ও পায়ের গোড়ালি জোড়া রাখতে হবে। এরপর শ্বাস ধীরে ধীরে গ্রহণের সাথে হাঁটু ভাঁজ না করে ঊরু ও পা দুটি সোজা রেখে মেঝে থেকে ওপরে তুলতে হবে। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকতে হবে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ৫/১০ সেকেন্ড পর শরীর শিথিল করতে করতে পা দুটি নামিয়ে শবাসন করে বিশ্রাম নিতে হবে। আসনটি ৪/৫বার অনুশীলন করতে হবে।

শলভাসনের উপকারিতা:

মেরুদণ্ড ও কোমরের যে কোনো ব্যথায় এই আসন উপকারী। আসনটি মেরুদণ্ডকে নমনীয় ও সবল করে, তলপেট ও পিঠের নিচের অংশের মেদ কমায়। এতে ঊরু ও কোমরের পেশির গঠন সুন্দর হয়। আসনটি বাত বা সায়টিকার এক আশ্চর্য প্রতিষেধক। এই আসনে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয়, পেটে বায়ুর প্রকোপ কমে যায়, পেট ফাঁপা সারে, হজম-শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফুসফুস সংলগ্ন স্নায়ুগুলো এবং বায়ুধারণকারী কোষগুলো সুপুষ্ট ও সবল হয়।

Content added By
Promotion